শওকত আলম, কক্সবাজার।
“আব্বা তাড়াতাড়ি কর- আমাকে গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখেছে" এ-ই ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওতে বলা কথাই নাড়া দিয়েছে গোটা দেশ কে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভিডিও ভাইরাল হওয়া অপহৃত শিশু মোহাম্মদ আরাকান (৬) এর অপহরণকারীদের গ্রেফতার করেছে উখিয়া থানা পুলিশ। ২০ জানুয়ারি সোমবার বিকাল ৪ টার দিকে দুই রোহিঙ্গা অপহরণকারীকে ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়।
অপহরণকারীরা উখিয়া উপজেলা কুতুপালং রেজিস্ট্রার ক্যাম্পের এমআরসি নং-২৩৮২৩-বি, ক-এফ এ-র বসবাসরত মৃত নুরুল হকের ২ ছেলে নুর ইসলাম (২১) ও মোহাম্মদ সালাম(১৯)।
ক্যাম্প-১৯, তাজনিরমারখোলা রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অপহৃত শিশু মোহাম্মদ আরকান (৬)ভিকটিম এ-র পিতা আব্দুর রহমান বাদি হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাত নামা আসামি করে এজাহার দায়ের করেন। যাহার উখিয়া থানার মামলা নং-
৩৮/৩৮, তারিখ- ১৮/০১/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০২০) এর ৭/৮/৩০।
এজাহারের সূত্র ধরে অপহরণকারী ২ জন্য কে গ্রেপ্তার পূর্বক আদালতে পেরন করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফাহমিদা সাত্তার জেল হাজতে পেরনের নির্দেশ দেন এবং একই সাথে ভিকটিমের ২২ ধারা জবানবন্দি গ্রহন করেন।
অপহৃত শিশু আরাকানের পিতা আব্দুর রহমান বলেন, আমার শিশু সন্তান ব্লক- সি/১৫ এর ফ্রেন্ডশীপ এনজিও সংস্থা পরিচালিত স্কুলে শিশু শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছে। আমার শিশু সন্তান উখিয়া থানাধীন ৫নং পালংখালী ইউপিস্থ ৪নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত ক্যাম্প ১৯ তাজনিরমার খোলা রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পস্থ ব্লক সি/১৫ এর আমার ক্যাম্পের ঘরের পার্শ্বে রাস্তায় খেলা করার সময় ০৮/০১/২০২৫ তারিখ দুপুর অনুমান ২:০০ ঘটিকার সময় অজ্ঞাত নামা ৩/৪ জন বিবাদী অজ্ঞাত নামা লোকের চালিত অজ্ঞাত নাম্বারের একটি সিএনজি অটোরিক্সা গাড়ি নিয়া ঘটনাস্থলে আসিয়া অতর্কিত গাড়ি হইতে নামিয়া আমার শিশু সন্তানকে নাস্তা খাওয়ানোর কথা বলিয়া জোর পূর্বক সিএনজি গাড়িতে উঠাইয়া অপহরণ করিয়া অজ্ঞাত স্থানে নিয়া যায়। আমার শিশু সন্তান সঠিক সময়ে আমার ক্যাম্পের ঘরে ফিরে না আসায় আমিসহ পরিবারের লোকজন আত্মীয় স্বজনের বসত বাড়িসহ সম্ভাব্যস্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করিতে থাকি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে অজ্ঞাত নামা বিবাদীরা ১১/০১/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ৮:০০ ঘটিকা হইতে ইং ১৬/০১/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ১১:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আমার ব্যবহারের মোবাইল সিম নং- ০১৮৩৭-৪৯৩৮৩৬ এবং আমাদের ক্যাম্পের ব্লক মাঝি- এনায়েত উল্লাহ এর ব্যবহারের মোবাইল সিম নং-০১৮১২-৪২০৫৩৪ এ কল করিয়া আমার শিশু সন্তান ১নং সাক্ষী তাদের হেফাজতে আটক আছে, উদ্ধার করিতে হইলে তাদেরকে ৭,০০,০০০/- (সাত লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দিতে হইবে বলিয়া টাকা দাবী করে, টাকা না দিলে অজ্ঞাত নামা বিবাদীরা আমার শিশু সন্তানকে খুন করিয়া লাশ গুম করিবে বলিয়া হুমকি দেয় এবং টাকা পাঠানোর জন্য মোবাইল সিম নং- ০১৮৬৫-২০৩২২১ (বিকাশ) প্রদান করে। পরবর্তীতে বিবাদীরা তাদের ব্যবহারের মোবাইল সিম হইতে আমার ব্যবহারের মোবাইল সিম নং- ০১৮৩৭-৪৯৩৮৩৬ এর ইমু নাম্বারের আমার শিশু সন্তানকে মাটির ভিতরে অর্ধেক ঢুকানো অবস্থায় এবং হাত পা বেঁধে নির্যাতনের কয়েকটি ছবি প্রেরণ করে। তাৎক্ষনাৎ আমি উক্ত ছবি সমুহ বর্ণিত সাক্ষীগণ, ক্যাম্পের গন্যমান্য লোকজনদের অবগত করি। আমি নিরুপায় হইয়া আমার শিশু সন্তানকে উদ্ধারের নিমিত্তে ৬নং সাক্ষী মোহাম্মদ আলম এর ব্যহারের মোবাইল সিম নং- ০১৬০৪-৪৮৪১৭৪ (বিকাশ পার্সনাল) হইতে অজ্ঞাত নামা বিবাদীদের প্রদত্ব ব্যবহারের মোবাইল সিম নং- ০১৮৬৫-২০৩২২১ (বিকাশ) এ ইং ১২/০১/২০২৫ তারিখ সকাল অনুমান ১১:৩০ ঘটিকার সময় ১ম দফায় ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা এবং ২য় দফায় ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা সহ সর্বমোট ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রেরণ করি। অজ্ঞাত নামা বিবাদীরা আমার নিকট হইতে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করার পর আরও ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবী করিলে আমিসহ ক্যাম্পের গন্যমান্য লোকজন আমার অপহৃত শিশু সন্তানকে নির্যাতনের ভিড়িও চিত্র ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করিয়া ভাইরাল করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করিয়া ভাইরাল হলে আদায়কৃত মুক্তিপন দিয়ে আমার শিশু সন্তান কে ফেরত দিলে ভিকটিম কে উদ্ধারপূর্বক চিকিৎসা গ্রহন করি।
0 Comments