ফরিদ আলম সিকদার কক্সবাজার ২৬-০৪-২৫

আজ শুক্রবার বাদে আছর নামাজ শেষে বাহারছড়া গোলচক্তর মাঠে মরুহুমার প্রথম  জানাযার নামাজের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের মা  

সাবেক সংসদ সদস্য ছালেহা খানম।

গতকাল রাত ১০ টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

ছালেহা খানম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ আসরের নামাজের পর বাহার ছড়া গোলচক্কর মাঠে মরহুমার প্রথম নামাজে জানাযা ও মাগরিবের নামাজের পর মরহুমার গ্রামের বাড়ী পোকখালী গোমাতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মাঠে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি ছালেহা খানম অসুস্থ হলে তাকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া ঢাকায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন

(ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন) 

এক নজরে ছালেহা খানম

নিরিবিলি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, শিল্প উদ্যোক্তা মরহুম মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের সহধর্মীনী ও কক্সবাজার সদর রামু ঈদগাঁও আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎসজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজলের মমতাময়ী মা ছালেহা খানম ১৯৪২ সালে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন হাজী আবদুল জলিল। তাদের পরিবারে ১১ ছেলে মেয়ের মধ্যে ছালেহা খানম ৪র্থ।

তিনি কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৬২ সালে কক্সবাজার পোকখালীর গোমাতলীর সন্তান, বিশিষ্ট শিল্পপতি নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে হয়।

দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে চট্টগ্রাম দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র মহিলা এমপি মনোনীত হয়ে মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও  সক্রিয় ভূমিকার বার্তা দিয়েছেন। 

তিনি একজন রত্নগর্ভা মা। যার অসাধারণ দৃঢ়তা, মেধা ও ত্যাগের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে অনন্য অবদান রেখেছেন।

তিনি একইসাথে রাজনৈতিক কর্মী এবং গৃহিণী হিসেবে চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা সামলিয়েছেন যা তাঁর অসামান্য সময় ব্যবস্থাপনা ও ধৈর্যের পরিচয় দেয়।   সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তাঁর পরিবারে ৪ ছেলে ও  এক কন্যা সন্তানের মধ্যে সবার বড় কন্যা জেসমিন রহমান, ছেলে লুৎফুর রহমান কাজল, মেঝ ছেলে মশিউর রহমান রাজন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, ও ছোট ছেলে সদ্য প্রয়াত মোর্শেদুর রহমান তোহিন।

গৃহস্থালি ও তাঁর স্বামী মরহুম মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত নিরিবিলি গ্রুপের পরিচালক হয়ে অনন্য ভূমিকা রেখে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন।

সন্তানদের শিক্ষা ও উন্নত জীবনের জন্য তিনি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগের মাধ্যমে একজন সত্যিকারের মায়ের মহত্ত্বকে প্রস্ফুটিত করেন। তাঁর সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো পরিবার ও সমাজের জন্য গর্বের। তাঁর জীবনী অধ্যবসায়, ও দেশপ্রেমের এক জীবন্ত দলিল, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।  

তিনি একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নারী যিনি মাতৃত্ব, রাজনীতি ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে সমন্বয় করে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।তাঁর জীবন সংগ্রাম, সাফল্য ও মানবিক বাস্তব উদাহারন রেখে গেলেন  মরুহুমা ছালেহা খানন।