শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়াঃ

অশিক্ষিত ও অদক্ষ রোহিঙ্গা কিশোরদের দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বেপরোয়া ব্যবসা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চিকিৎসাসেবার নামে রমরমা অবৈধ ফার্মেসি ব্যবসা এখন খোলামেলা গোপন সত্য। বিশেষ করে কুতুপালং, লম্বাশিয়া, মুচনীসহ বিভিন্ন ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি চালু রয়েছে, যেগুলোর একটিও সরকারি বা বিএমডিসি অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। অথচ প্রতিদিন এসব দোকান থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন— যাদের অনেকে পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কিছু অসাধু ফার্মেসি মালিক নিজেদের নামের বৈধ লাইসেন্সের কপি ব্যবহার করে তৈরি করেছেন একাধিক 'ভুয়া' ফার্মেসি। কেউ কেউ আবার কম্পিউটারে এডিট করে বানিয়েছেন ভুয়া লাইসেন্স। একই ব্যক্তির লাইসেন্স তিন-চারটি দোকানে ব্যবহার হচ্ছে— যা বাংলাদেশের ওষুধ আইন ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতির চরম লঙ্গণ হচ্ছে। 

এসব ফার্মেসির বেশিরভাগ দোকানে দেখা গেছে, অদক্ষ ও অশিক্ষিত রোহিঙ্গা কিশোর ও যুবকরা কাজ করছেন তথাকথিত 'সেলসম্যান' হিসেবে। যাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা কিংবা ওষুধ সেবনের ঝুঁকি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা। রোগ নির্ণয়, প্রেসক্রিপশন কিংবা ওষুধের ডোজ নির্ধারণে এসব কিশোরদের অজ্ঞতা রীতিমতো ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য।

এই অবৈধ ফার্মেসিগুলোর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির নাম উঠে আসছে। তারা ফার্মেসির লাইসেন্স ‘ভাড়া’ দিয়ে কিংবা নিজেরাই রোহিঙ্গাদের সামনে রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছেন। অথচ এই অর্থের কোনো আয়কর হিসাব নেই, এবং এই সব কার্যক্রমের সাথে জড়িত অধিকাংশরাই প্রশাসনের নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ হাসান আলী বলেন, এই দোকানগুলোতে যারা বসে, তাদের চিকিৎসা বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। ভুল ওষুধ দেয়, অনেকে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। এটা বড় বিপদ।

অন্য এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার ছোট ছেলেকে জ্বরের ওষুধের বদলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়— যার প্রতিক্রিয়ায় শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সচেতন মহল মনে করছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। ড্রাগ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করে অবিলম্বে ক্যাম্পগুলোতে অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তাদের মতে, এই অবৈধ চিকিৎসা ব্যবসা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ক্যাম্পজুড়ে বড় ধরনের স্বাস্থ্যবিপর্যয় ঘটতে পারে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।